সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ, নিউরন ও সিন্যাপস

You are currently viewing সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ, নিউরন ও সিন্যাপস

সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ, নিউরন ও সিন্যাপস:

তোমরা কি খেয়াল করেছ বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীর মানুষ কিভাবে একে অপরের সাথে কানেক্টেড আছে? হ্যাঁ, একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মাধ্যমে আমরা পরস্পরের সাথে সংযুক্ত আছি এবং পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের খবর মুহূর্তেই পেয়ে যাচ্ছি। ঠিক সেইরকম একটি শক্তিশালী ও জটিল নেটওয়ার্ক সিস্টেম  আমাদের শরীরের মধ্যেও আছে। এটিকে বলা হয় নিউরাল নেটওয়ার্ক বা নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্র। । এখানে সমন্বয় হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে অঙ্গতন্ত্রগুলো সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন দৈহিক ও শারীরবৃত্তীয় কাজ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করছে। আমাদের স্নায়ুতন্ত্র এক্ষেত্রে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পরিবেশ থেকে উদ্দীপনা গ্রহণ করে প্রধান সমন্বয়ক ও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।  যেমন-আমরা যখন কোন শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করি তখন পেশির কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য শক্তির চাহিদা বেড়ে যায়।

অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য শ্বসনহার বেড়ে যায়। হার্ট বিট, রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। যখন ব্যায়াম বন্ধ করা হয় তখন স্নায়ু, ফুসফুস, পেশি, হৃদপিণ্ড, কিডনি, রক্তনালিকা তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। এভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গাণু সমন্বিতভাবে শারীরিক পরিশ্রমের ব্যাপারটি সম্পন্ন করে স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে।  মানুষের স্নায়ুতন্ত্র দুই ভাগে বিভক্ত। যথা- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র(Central Nervous System) ও প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র(Peripheral Nervous System)।

নিউরনঃ স্নায়ুতন্ত্রের গঠণ ও কাজের একককে বলা হয় নিউরন।  যার কাজ হচ্ছে বিভিন্ন স্নায়ু উদ্দীপনা শনাক্ত করা, গ্রহণ করা ও প্রবাহিত করা। 

একটি নিউরন মূলত তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত। যথা-

১। কোষ দেহঃ এটি নিউরনের গোলাকার অংশ যেখানে সেন্ট্রিওল ছাড়া সকল কোষীয় অঙাণু বিদ্যমান। এর বাইরের প্লাজমা মেমব্রেনকে বলা হয় নিউরিলেমা। 

২। ডেনড্রাইটঃ কোষদেহ থেকে বৃক্ষের শাখা-প্রশাখার মতো প্রলম্বিত অংশগুলোকে বলা হয় ডেনড্রাইট। এরা অন্য নিউরন থেকে স্নায়ু উদ্দীপনা গ্রহণ করে।  

৩। অ্যাক্সনঃ কোষদেহের কোনাকৃতির অংশ অ্যাক্সন হিল্লক থেকে উৎপন্ন লম্বা তন্তুকে বলা হয় অ্যাক্সন। অ্যাক্সন হিল্লকে মূলত স্নায়ু উদ্দীপনা তৈরি হয় এবং   এটি ট্রিগার হিসবে কাজ করে। অ্যাক্সন হচ্ছে প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র যা সোয়ান কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং সাদা চর্বি জাতীয় চকচকে মায়েলিন শিথ গঠন করে  যা ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করে। এই মায়েলিন শিথের মাঝে মাঝে যে গ্যাপ থাকে তাকে বলা হয় র‍্যানভিয়ার পর্ব যা বুস্টার সাইট হিসেবে কাজ করে। ফ্রেন্স প্যাথোলোজিস্ট লুইস অ্যান্টনি র‍্যানভিয়ার এর নাম অনুসারে এর নাম হয়েছে র‍্যানভিয়ার। অ্যাক্সনের শেষ প্রান্তে বাল্বের মতো অংশগুলোকে বলা হয় সিন্যাপটিক নব। 

নিউরনের প্রকারভেদঃ অ্যাক্সন ও ডেনড্রাইটের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে নিউরন চার ভাগে বিভক্ত। যেমন-

১। Multipolar— একটি অ্যাক্সন ও দুই বা ততোধিক ডেনড্রাইট থাকে। মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্সে পাওয়া যায়।

২। Bipolar— একটি অ্যাক্সন ও একটি ডেনড্রাইট থাকে। সংবেদী অঙ্গ যেমন-চোখের রেটিনাতে পাওয়া যায়। 

৩। Unipolar—  কোষ দেহ ও একটি অ্যাক্সন থাকে। সাধারণত এটি ভ্রূণীয় পর্যায়ে পাওয়া যায়।   

৪। Pseudo-unipolar— এর একটি অ্যাক্সন দুইভাগে বিভক্ত হয়ে এক অংশ যায় কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে এবং আর এক অংশ প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রে। যেমন- স্পাইনাল কর্ডের গ্যাংলিয়া।  

সিন্যাপসঃ পরপর দুটি নিউরনের মাঝখানে একটি সুক্ষ্ম ফাঁকাস্থান থাকে।  একে বলা হয় সিন্যাপটিক ক্লেফ্ট।

যে নিউরন থেকে উদ্দীপনা আসে তাকে প্রি-সিন্যাপটিক নিউরন বলে। এর মেমব্রেনকে বলে প্রিসিন্যাপটিক মেমব্রেন। অপরপক্ষে, যে নিউরন উদ্দীপনা গ্রহণ করে তাকে বলে পোস্ট-সিন্যাপটিক নিউরন এবং এর মেমব্রেনকে বলা হয় পোস্ট-সিন্যাপটিক মেমব্রেন। একত্রে এই প্রি-সিন্যাপটিক মেমব্রেন, সিন্যাপটিক ক্লেফ্ট ও পোস্ট-সিন্যাপটিক মেমব্রেনকে বলে সিন্যাপস। প্রকৃতপক্ষে পরপর দুটি নিউরনের সংযোগস্থলকে বলা হয় সিন্যাপস।      

উৎপল কুমার, প্রভাষক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, শাহজাদপুর সরকারি কলেজ, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ।         

Leave a Reply