মানব মস্তিষ্কের গঠন ও কাজ

You are currently viewing মানব মস্তিষ্কের গঠন ও কাজ

মানব মস্তিষ্কের গঠন ও কাজ সম্পর্কে জানতে হলে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে হবে। যেমন- তুমি কি জানো তোমার চোখের পাতা লাফায় কেন? বা তোমার জন্মদিনে এত আনন্দ পাও  কেন? অথবা স্বপ্ন কোথা থেকে আসে?

এই সব কিছুর ইনচার্জ হচ্ছে আমাদের ব্রেন বা মস্তিষ্ক।  আমাদের সকল চিন্তা-ভাবনা এবং কার্যক্রম পরিচালিত হয় মস্তিষ্ক থেকে। অসংখ্য নিউরন এবং হরমোনের সমন্বয়ের মাধ্যমে এই কাজগুলো সম্পন্ন হয়। কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সামনের অংশ স্ফীত হয়ে করোটিকা বা খুলির মধ্যে মস্তিষ্ক গঠন করে। করোটিকার ভেতরে মেনিনজেস নামক পর্দা দ্বারা মস্তিষ্ক আবৃত থাকে। এই মস্তিষ্কই আমাদের শরীরের বস হিসেবে কাজ করে।  এটি তিনটি অংশে বিভক্ত থাকে।  

মানব মস্তিষ্কের গঠন ও কাজ

(১) অগ্রমস্তিষ্ক(Forebrain or Prosencephalon)

(২) মধ্যমস্তিষ্ক(Midbrain or Mesencephalon)

(৩) পশ্চাৎমস্তিষ্ক(Hindbrain or Rhombencephalon)    

অগ্রমস্তিষ্ক(Forebrain)

অগ্রমস্তিষ্কের প্রধান অংশগুলো-

(ক) সেরেব্রাম(Cerebrum)- এটি মস্তিষ্কের সবথেকে বড় অংশ এবং দুটি খন্ডে বিভক্ত থাকে।  বাম সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার(Left cerebral hemisphere) এবং ডান সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার(Right cerebral hemisphere)। হেমিস্ফিয়ার দুটি পরস্পরের সাথে কর্পাস ক্যালোসাম নামক স্নায়ু দ্বারা সংযুক্ত থাকে। 

ডান সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার দেহের বাম অংশকে এবং বাম সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার দেহের ডান অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে। সেরেব্রামের পৃষ্ঠতলে উঁচু জায়গাগুলোকে বলে জাইরাস এবং নিচু জায়গাকে বলে ফিসার। এর বাইরের স্তরকে বলে সেরেব্রাল কর্টেক্স যেটি গ্রে ম্যাটারে গঠিত এবং ভেতরের স্তরকে বলে সেরেব্রাল মেডুলা যেটি হোয়াইট ম্যাটারে গঠিত।  প্রতিটি সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার আবার ফ্রন্টাল লোব, প্যারাইটাল লোব, অক্সিপিটাল লোব, টেমপোরাল লোবে বিভক্ত।

সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ার

কাজঃ  এটাকে মস্তিষ্কের থিংকিং পার্ট বলা হয়। তোমার চিন্তা, বুদ্ধি, ইচ্ছাশক্তি, সৃজনশীল কাজের নিয়ন্ত্রণ এখান থেকেই হয়। শর্ট টার্ম ও লং টার্ম মেমোরী এখানেই অবস্থান করে।  ঐচ্ছিক পেশীগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ হয়। অর্থাৎ তুমি নাচতে বা ফুটবলে লাথি মারতে চাইলে সেরেব্রাম তোমাকে হেল্প করে।     

(খ) থ্যালামাস(Thalamus)-  এটি দেখতে ডিম্বাকৃতির এবং   গ্রে ম্যাটারে গঠিত।  

কাজঃ এটি সংবেদী স্নায়ুর রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করে।  চোখ, কান, নাক, আঙ্গুল প্রভৃতি অঙ্গ থেকে আসা উদ্দীপনাকে কর্টেক্সে পাঠায় এবং ফিডব্যাক গ্রহন করে। চাপ, স্পর্শ,  যন্ত্রণা, আবেগের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। একে ইমোশনাল ব্রেনও বলা হয়। 

(গ) হাইপোথ্যালামাস(Hypothalamus)- এটি থ্যালামাসের ঠিক নিচে এবং পিটুইটারি গ্রন্থির সাথে যুক্ত থাকে।  

কাজঃ এটি স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুর কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে৷ পিটুইটারি গ্রন্থির ক্ষরণও নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষুদা, তৃষ্ণা, ঘুম, রাগ, ভালোলাগা, উদ্বেগ, দেহতাপ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ যদি পরিবেশের তাপমাত্রা শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হয় তাহলে এটি শরীরকে সংকেত দিবে ঘামতে। আর যদি তাপমাত্রা কম হয় যেমন শীতে, তখন শরীরকে সংকেত দিবে কাঁপতে।  

মধ্যমস্তিষ্ক(Midbrain)-

এটি হাইপোথ্যালামাসের নিচে ও সেরেবেলামের সামনে অবস্থিত।  অগ্রমস্তিষ্ক ও পশ্চাৎ মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে মাস্টার কো-অর্ডিনেটর এর ভূমিকা পালন করে।  দর্শন ও শ্রবণের তথ্যের সমন্বয় ঘটায়।   

পশ্চাৎমস্তিষ্ক(Hindbrain)

এটি ৩টি অংশ নিয়ে গঠিত। সেরেবেলাম, পনস ও মেডুলা অবলংগাটা। 

(১) সেরেবেলাম(Cerebellum)- সেরেবেলামকে ‘ Little Brain’ বলা হয় কারন এটি কর্টেক্সের সংক্ষিপ্ত ভার্সন। এটি ভারসাম্য রক্ষা , চলন ও সমন্বয়ের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। যেমন- সাইকেল চালানো,  দৌড়ানো ইত্যাদি। 

(২) পনস(Pons)- পনস সেরেব্রাম, সেরেবেলাম এবং স্পাইনাল কর্ডের মধ্যে রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করে। স্বাভাবিক শ্বাসক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে।  

(৩) মেডুলা অবলংগাটা(Medulla Oblongata)- মেডুলা অবলংগাটা স্পাইনাল কর্ডের উপরে অবস্থান করে এবং হৃৎস্পন্দন,  শ্বসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।    

বিভিন্ন প্রাণীর মস্তিষ্কের তুলনামূলক চিত্র-

বিভিন্ন প্রাণীর মস্তিষ্কের তুলনামূলক চিত্র

আমরা আমাদের মস্তিষ্কের জন্য তাহলে কি করতে পারি? 

  • ভিটামিন ও মিনারেলস্ সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ।  
  • নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়াম করতে হবে। 
  • মাদকসেবন নয়।
  • বইপড়া, সংগীত চর্চা,  সমস্যা সমাধান করা, অঙ্কন করা প্রভৃতি চ্যালেঞ্জিং কাজের মাধ্যমে ব্রেনকে সক্রিয় রাখতে হবে।   

Leave a Reply