মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে জীববিজ্ঞান ২য় পত্র বা প্রাণিবিজ্ঞান থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রশ্ন এসে থাকে। এই তথ্যগুলো ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রাণিবিজ্ঞানের প্রস্তুতি নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থেকে ২৫ নম্বর থাকবে। সেখানে প্রাণিবিজ্ঞান থেকে কমপক্ষে ১২-১৫টি প্রশ্ন থাকার সম্ভাবনা আছে। এখানে অতি সংক্ষেপে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার পূনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাস অনুযায়ী প্রাণিবিজ্ঞানের কিছু তথ্য তুলে ধরা হল।
১। প্রাণীর বিভিন্নতা ও শ্রেণিবিন্যাস
- প্রাণিবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটলের(৩৮৪-৩২২) এর বিখ্যাত বই Historia Animalium
- Philosophie Zoologique গ্রন্থের লেখক এবং Biology শব্দের প্রবর্তক জাঁ- বাপটিস্ট ল্যামার্ক
- প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের প্রবক্তা চার্লস রবার্ট ডারউইন এর বিখ্যাত বই On the origin of species by means of natural selection
- ভ্রূণবিদ্যা-Embryology, আচরণবিদ্যা-Ethology, কীটবিদ্যা-Entomology, পাখিবিদ্যা-Ornithology, রেশম চাষ-Sericulture, মৌমাছি পালন-Apiculture
- ত্রিপদ নামকরণের জনক পাখি বিজ্ঞানী Schlegel
- ক্লিভেজের সময় ডিমের যে প্রান্তে কুসুম থাকে তাকে ভেজিটাল পোল এবং যে প্রান্তে নিউক্লিয়াস থাকে তাকে অ্যানিমেল পোল বলে।
- অরীয় প্রতিসাম্য প্রাণী-হাইড্রা, জেলিফিশ(Aurelia aurita); দ্বিপার্শীয় প্রতিসাম্য- প্রজাপতি, ব্যাঙ, মানুষ; অপ্রতিসাম্য-স্পঞ্জ, আপেল শামুক(Pila globosa)
- সিলোমবিহীন(Acoelomate)-Porifera, Cnidaria, Platyhelminthes; অপ্রকৃত-সিলোমেট(Pseudocoelomate)- Nematoda; প্রকৃত সিলোমেট(Eucoelomate)-Mollusca, Annelida, Arthropoda, Echinodermata, Chordata
- Cnidaria পর্বের প্রাণীদের সমুদ্রের ফুল বলা হয় এবং এদের সিলেন্টরন থাকে।
- শিখা কোষ থাকে Platyhelminthes পর্বের প্রাণীতে, র্যাডুলা ও ম্যান্টল দেখা যায় Mollusca পর্বে, নেফ্রিডিয়া থাকে Annelida তে
- সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ, ট্যাগমাটা, পুঞ্জাক্ষি, হিমোসিল ও ম্যালপিজিয়ান নালিকা দেখা যায় প্রাণিজগতের বৃহত্তম পর্ব Arthropoda তে
- Echinodermata- কণ্টকত্বক সামুদ্রিক, পঞ্চঅরীয় প্রতিসাম্যতা, পানি সংবহনতন্ত্র, টিউব ফিট । উদাহরণ- সামুদ্রিক শসা(Holothuria tubulosa)
- Eurochordata- লার্ভা দশায় লেজে নটোকর্ড থাকে। সাগর ফোয়ারা এবং টিউনিকেটস নামে পরিচিত। উদাহরণ- Ascidia
- Cephalochordata- মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত সারাজীবন নটোকর্ড থাকে। ওরাল হুড ও মায়োটম পেশি দেখা যায়। উদাহরণ-Branchiostoma
- Vertebrata- পূর্ণাঙ্গ দশায় নটোকর্ড মেরুদণ্ড দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। Homo sapiens
- Myxini শ্রেণির প্রাণীরা হ্যাগফিশ(Hag fish) বা স্লাইম ঈল(Slime eel) নামে পরিচিত।
- প্ল্যাকয়েড আঁইশ এবং হেটারোসার্কাল লেজ থাকে হাঙ্গরে। সাইক্লয়েড আঁইশ ও হোমোসার্কাল লেজ থাকে রুই মাছে, টিনয়েড আঁইশ-কই মাছ।
- মারসুপিয়াল বলা হয় ক্যাঙ্গারুকে, এ প্রাণীটি অস্ট্রেলিয়াতে পাওয়া যায়।
- কিছু প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম: চড়ুই(Passer domesticus), ফিতা কৃমি(Taenia solium), সুতা কৃমি(Ascaris lumbricoides), যকৃত কৃমি(Fasciola hepatica), জোঁক(Hirudo medicinalis), ডেঙ্গু মশা(Aedis aegypti), ইলিশ মাছ(Tenualosa ilisha)
- ১৬.৫ কোটি বছর পূর্বের মেসোজোয়িক যুগকে বলা হয় সরিসৃপের যুগ। এ যুগে পৃথিবীতে ডাইনোসর বিচরণ করত।
- যে সকল প্রাণীর দেহের তাপমাত্রা পরিবেশের তাপমাত্রার সাথে উঠানামা করে তাদের এক্টোথার্মিক বা শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী বলে। মাছ, উভচর ও সরিসৃপ।
২.১। প্রাণীর পরিচিতি: হাইড্রা (Hydra)
- সুইজারল্যান্ডের প্রকৃতিবিজ্ঞানী আব্রাহাম ট্রেম্বলে ১৭৪৪ সালে প্রচণ্ড পুনরুৎপত্তি ক্ষমতা সম্পন্ন, দ্বিস্তরী(diploblastic), মাংসাশী (Carnivorous) প্রাণী Hydra কে আবিষ্কার করেন।
- বাংলাদেশে মোট তিন প্রজাতির হাইড্রা পাওয়া যায়। বাদামী(Hydra oligactis), সবুজ(Hydra viridissima) এবং হলুদ-বাদামী(Hydra vulgaris)
- মুকুলোদগম ও বিভাজন হাইড্রার অযৌন জনন প্রক্রিয়া।
- এক্টোডার্ম ও এন্ডোডার্মের মাঝে মেসোগ্লিয়া নামক অকোষীয় ও জেলির মত স্তর থাকে।
- হাইড্রার পেশী-আবরণী কোষের কর্ষিকা নিডোব্লাস্ট (পরিস্ফুটনরত নিডোসাইট) ধারণ করে। নিডোসিল ট্রিগারের মত কাজ করে।
- নেমাটোসিস্টের গহ্বর প্রোটিন ও ফেনলে গঠিত হিপনোটক্সিন নামক বিষাক্ত তরলে পূর্ণ থাকে। স্টিনোটিল বা পেনিট্র্যান্ট নেমাটোসিস্ট শিকারের দেহে হিপনোটক্সিন প্রবেশ করিয়ে অজ্ঞান ও অবশ করে ফেলে।
- লুপিং বা হামাগুড়ি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার জন্য, সমারসল্টিং বা ডিগবাজি দ্রুতগতির চলন, গ্লাইডিং বা অ্যামিবয়েড চলন অত্যন্ত ধীরগতির, ভাসা(Floating) চলনে বুদবুদ সৃষ্টি হয়, হাইড্রার আরোহণ ও অবরোহণ সম্পন্ন হয় হামাগুড়ি(Crawling) প্রক্রিয়ায়।
- হাইড্রায় শ্রমবণ্টন ও মিথোজীবিতা বা সিমবায়োসিস দেখা যায়। দুটি ভিন্ন প্রজাতিভুক্ত জীব এ প্রক্রিয়ায় পরস্পর উপকৃত হয়।
২.২। প্রাণীর পরিচিতি: ঘাসফড়িং (Poekilocerus pictus)
- বাংলাদেশে ২০ প্রজাতির ঘাসফড়িং পাওয়া যায়। এরা তৃণভোজী(herbivorous) এবং Insecta বা পতঙ্গ শ্রেণিভুক্ত, দেহ মস্তক, বক্ষ ও উদরে বিভক্ত।
- মস্তক হাইপোগন্যাথাস ধরণের, মস্তকের বহিঃকঙ্কাল ভার্টেক্স, জেনা, ফ্রন্স ও ক্লাইপিয়াসে বিভক্ত। মস্তক একজোড়া পুঞ্জাক্ষি, তিনটি সরলাক্ষি বা ওসেলি, একজোড়া এন্টেনা এক সেট মুখোপাঙ্গ বহন করে। মুখোপাঙ্গ চর্বন-উপযোগী বা ম্যান্ডিবুলেট ধরণের।
- প্রত্যেক পুঞ্জাক্ষি প্রায় ২০০০ ষড়ভূজাকার ওমাটিডিয়া নিয়ে গঠিত। উজ্জ্বল আলোতে মোজাইক বা অ্যাপজিশন এবং মৃদু আলোতে সুপারপজিশন প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।
- অগ্রবক্ষকে প্রোনোটাম বলে। পা পাঁচটি খণ্ডে বিভক্ত-কক্সা, ট্রোক্যান্টর, ফিমার, টিবিয়া, টার্সাস। এদের পা কে সালটাটোরিয়াল পা বলে।
- উদর ১১টি খণ্ডকে বিভক্ত; ১ম খণ্ডকে টিমপেনাম পর্দা থাকে। মোট ১০ জোড়া স্পাইরাকল বা শ্বাসরন্ধ্র থাকে। টিনিডিয়া(ctenidia) ট্রাকিয়াকে চুপসে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
- পুরুষ ঘাসফড়িং এর ৯ম খণ্ডকে পুংজনন রন্ধ্র থাকে। ১০ম খণ্ডকে অ্যানাল সারকি থাকে।
- স্ত্রী ঘাসফড়িং এর ৮ম ও ৯ম খণ্ডক মিলে স্ত্রী জনন রন্ধ্র থাকে। ৯ম খণ্ডকে ওভিপজিটর থাকে।
- মুক্ত রক্ত সংবহনতন্ত্র, হিমোসিল(রক্তপূর্ণ দেহগহ্বর), হিমোলিম্ফ(রক্ত যখন লসিকার সাথে মিশ্রিত থাকে)। ৭ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট হৃদযন্ত্রে অ্যালারী পেশি থাকে; একে নিউরোজেনিক হার্ট বলা হয়।
- ঘাসফড়িং এর রুপান্তর অসম্পূর্ণ বা হেমিমেটাবোলাস ধরণের এবং ৩টি ধাপে সম্পন্ন হয়। ডিম, নিম্ফ, পূর্ণাঙ্গ প্রাণী। ডিম ফুটে যে ঘাসফড়িং বেড়িয়ে আসে তাকে নিম্ফ বলে।
- অসম্পূর্ণ রুপান্তরে ৪টি ধাপ। ডিম, লার্ভা, পিউপা, ইমাগো। এদের শিশু অবস্থায় প্রাণীকে বলে লার্ভা।
- একডাইসন হরমোনের প্রভাবে ঘাসফড়িং এর নিম্ফ দশায় খোলস মোচন বা মোল্টিং সম্পন্ন হয়।
২.৩। প্রাণীর পরিচিতি: রুই মাছ (Labeo rohita)
- রুই মাছে সাইক্লয়েড আঁইশ ও হোমোসার্কাল পুচ্ছ পাখনা, ফুলকা র্যাকার থাকে। ফুলকা প্রধান শ্বসন অঙ্গ। ব্রাঙ্কিওস্টিগাল পর্দা থাকে কানকোর পশ্চাৎ কিনারায়।
- হৃদপিণ্ডের মধ্য দিয়ে কেবল CO2 সমৃদ্ধ রক্ত বাহিত হয় বলে রুই মাছের হৃদপিণ্ডকে ভেনাস হার্ট বা শিরা হৃদপিণ্ড বলে। একচক্রী হৃদপিণ্ড।
- রুই মাছের অন্ননালি ও বায়ুথলির মাঝে নিউম্যাটিক নালি নামক সংযোগকারী নালি থাকে। বায়ুথলি কতগুলো অস্থির সাহায্যে অন্তঃকর্ণের সাথে যুক্ত থাকে একে ওয়েবেরিয়ান ওসিকল বলে।
- প্রকৃতিতে জুন-জুলাই মাস রুই মাছের প্রজননের উপযুক্ত সময়। এদের অভিপ্রয়ান পোটামোড্রমাস ধরনের।
- ডিম ছাড়া ও শুক্রাণু নিঃসরণকে স্পনিং(spawning) বলে। বহিঃনিষেক ঘটে। নিষেকের পর ডিম পানিতে ভাসে বলে একে পেলাজিক ডিম বলে।
- হালদা নদী রুই মাছের বৃহৎ প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র।
৩। মানব শারীরতত্ত্ব: পরিপাক ও শোষণ
- সর্বভুক(omnivorous) প্রাণী মানুষের দৈনিক ১০০-১৫০ গ্রাম প্রোটিন এবং ২-৩ লিটার পানি পান করা উচিৎ।
- শর্করা পরিপাককারী এনজাইম-টায়ালিন, অ্যামাইলেজ, মল্টেজ, সুক্রেজ
- প্রোটিন পরিপাককারী এনজাইম-পেপসিন, ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন, অ্যামিনোট্রিপসিন
- লিপিড পরিপাককারী এনজাইম-লাইপেজ, ফসফোলাইপেজ, এস্টারেজ, লেসিথিনেজ। এরা লিপিডকে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে।
- একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন ১২০০-১৫০০ মিলিলিটার লালা ক্ষরণ করে। তিন জোড়া লালা গ্রন্থি থাকে। কানের নিচে প্যারোটিড গ্রন্থি, নিচের চোয়ালের ভিথর দিকে সাবম্যান্ডিবুলার এবং জিহ্বার নিচে সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি থাকে। লালার PH=6.2-7.4(অম্লীয়)। লালায় টায়ালিন ও মল্টেজ নামক শর্করাবিশ্লেষী এনজাইম পাওয়া যায়।
- মানুষের দাঁত ডাইফায়োডন্ট ধরনের। ২-৬ বছরের মধ্যে ২০টি দুধ দাঁত গজায়। দন্ত সংকেত I2C1P2M3/ I2C1P2M3
- পাকস্থলির অংশ-কার্ডিয়া (যে অংশ অন্ননালিতে উন্মুক্ত হয়), ফানডাস, বড় বাঁক, ছোট বাঁক, পাইলোরাস(ডিওডেনামে উন্মুক্ত হয়)। প্যারাইটাল কোষ থেকে HCl ক্ষরিত হয়। গ্যাস্ট্রিন নামক হরমোনের প্রভাবে গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিক জ্যুস ক্ষরণ হয়।
- ক্ষুদ্রান্তের(দৈর্ঘ্য প্রায় ৬-৭ মিটার) অংশ-ডিওডেনাম(U আকৃতির), জেজুনাম, ইলিয়াম। খাদ্যের চূড়ান্ত পরিপাক ক্ষুদ্রান্তে ঘটে। ব্রুনার্স গ্রন্থি ও মিউকোসাতে গবলেট কোষ থাকে।
- যকৃত মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি যা দেহের ওজনের ৩-৫%, এটি জৈব রসায়নাগার নামেও পরিচিত। গ্লিসন ক্যাপস্যুলে আবৃত যকৃতে হেপটোসাইট, কেন্দ্রীয় শিরা, সাইনুসয়েড, কাপফার কোষ থাকে। ১৫০০ ঘন সে.মি. রক্ত সঞ্চয় করেতে পারে।
- গ্লাইকোজেনেসিস: গ্লুকোজ থেকে গ্লাইকোজেনে রুপান্তর প্রক্রিয়া
- গ্লুকোনিয়োজেনেসিস- অশর্করা জাতীয় বস্তু থেকে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয়।
- গ্লাইকোজেনোলাইসিস- রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে যকৃতে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন ভেঙ্গে গ্লুকোজ তৈরি হয়। এপিনেফ্রিন ও গ্লুকাগন হরমোন দ্বারা এ প্রক্রিয়াটি প্রভাবিত হয়।
- অতিরিক্ত শর্করা খেলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যায় যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের প্রধান কারণ।
- পিত্তরস ক্ষারীয় PH=8-8.6
- অগ্ন্যাশয় একটি মিশ্র গ্রন্থি, এতে উইর্সাং নালি(Duct of Wirsung) থাকে। অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যান্সের আলফা কোষ থেকে গ্লুকাগন হরমোন ক্ষরণ হয় যা গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন হরমোন ক্ষরণ হয় যা গ্লুকোজের পরিমাণ কমায়। ডেলটা কোষ থেকে সোমাটোস্ট্যাটিন হরমোন ক্ষরণ হয় যা আলফা ও বিটা কোষের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
- একজন স্বাভাবিক মানুষের BMI (Body Mass Index) 25-29.99; BMI=দেহের ওজন(কিলোগ্রাম)/ব্যক্তির উচ্চতা(মিটার)২
- জি-কোষ থেকে গ্যাস্ট্রিন এবং ডি-কোষ থেকে সোমাটোস্ট্যাটিন হরমোন ক্ষরিত হয়।
৪। মানব শারীরতত্ত্ব: রক্ত ও সঞ্চালন
- একজন পূর্ণবয়স্ক মানবদেহে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে যা দেহের ওজনের ৮% এর PH মাত্রা ৭.৩৫-৭.৪৫(ক্ষারীয়)। আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০৬৫। রক্তের প্লাজমায় পানির পরিমাণ ৯০-৯২%, কঠিন পদার্থ (৮-১০%), জৈব(৭-৯%)
- লোহিত রক্তকণিকার আয়ুষ্কাল ১২০ দিন। প্রতি ঘন মিলিমিটার রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা ৫০ লাখের চেয়ে ২৫% কম হলে Anaemia(রক্তাল্পতা) দেখা দেয়। এ সংখ্যা ৬৫ লাখের বেশি হলে পলিসাইথেমিয়া বলে। লার অস্থিমজ্জার স্টেমকোষ থেকে লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন হয়। লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে এরিথ্রোপয়েসিস বলে।
- দেহের ভ্রাম্যমান প্রতিরক্ষাকারী একক শ্বেত রক্তকণিকা যা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ধ্বংস করে।
- লিউকোমিয়া ক্যানসারের ক্ষেত্রে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। লিম্ফোসাইট থেকে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। বেসোফিল হেপারিন ও হিস্টামিন ক্ষরণ করে রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না।
- অনুচক্রিকার আয়ু ৫-৯ দিন, রক্ত জমাটে সহায়তা করে।
- প্লীহাকে রক্তের রিজার্ভার বা ব্লাড ব্যাংক বলে এবং লোহিত রক্তকণিকার কবরস্থান বলে।
- মানুষের হৃদপিণ্ড চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট এবং পেরিকার্ডিয়াম পর্দায় আবৃত। ডান অ্যাট্রিয়ামে সাইনো-অ্যাট্রিয়াল নোড বা পেস মেকার থাকে। পালমোনারি শিরা অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পরিবহণ করে। প্রতি মিনিটে ৭০-৮০ বার(গড়ে ৭৫ বার) হৃদস্পন্দন ঘটে। হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণকে সিস্টোল ও ডায়াস্টোল বলে। কার্ডিয়াক চক্রের সময়কাল ০.৮ সেকেন্ড। হৃদপিণ্ড বড় হয়ে যাওয়াকে কার্ডিওমেগালি(Cardiomegaly) বলে। করোনারি হৃদরোগের অপর নাম ইস্কিমিয়া। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হলে তাকে অ্যারিথমিয়া(Arrhythmia) বলে। এনজিওপ্লাস্টির সাহায্যে করোনারি ধমনির সরু হয়ে যাওয়া অংশকে প্রশস্ত করা হয়।
৫। জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন
- উইলিয়াম বেটসন সর্বপ্রথম Genetics শব্দ প্রচলন করেন। জিনতত্ত্বের জনক মেন্ডেল ৩৪ প্রকার মটরশুটি নিয়ে কাজ করেন।
- ক্রোমোজোমে জিনের অবস্থানকে লোকাস বলে।
- মেন্ডেলের ১ম সূত্রের ব্যতিক্রম- অসম্পূর্ণ প্রকটতা(১:২:১), সমপ্রকটতা(১:২:১), মারণ জিন বা লিথাল জিন(২:১)
- যে জিনের উপস্থিতি জীবের মৃত্যু ঘটায় তাকে লিথাল জিন বলে। লিথাল জিনঘটিত রোগ- থ্যালাসেমিয়া, সিকল সেল অ্যানিমিয়া, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, রেটিনোব্লাস্টোমা, ব্রাকিফ্যালাঞ্জি, মিউটেশন।
- মেন্ডেলের ২য় সূত্রের ব্যতিক্রম- পরিপূরক জিন(৯:৭), প্রকট এপিস্ট্যাসিস(১৩:৩), দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিস(৯:৭)। যে জিন অপর জিনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাধা দেয় সে জিনকে এপিস্ট্যাটিক জিন বলে। যে জিনটি বৈশিষ্ট্য প্রকাশে বাধা পায় তাকে হাইপোস্ট্যাটিক জিন বলে। মূক বধিরতা দ্বৈত প্রচ্ছন্ন এপিস্ট্যাসিসের অন্যতম উদাহরণ।
- একাধিক জিন যখন জীবের একটিমাত্র বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে তখন সেই জিনগ্রুপকে পলিজিন বলে। নিগ্রো ও শ্বেতাঙ্গের বিয়ে হলে এদের সন্তানদের গায়ের বর্ণ মাঝামাঝি বা মিউল্যাটো হয়।
- মানুষের ২২ জোড়া ক্রোমোজোমকে অটোজোম বলে এবং ২৩ জোড়ার ক্রোমোজোম দুটিকে হেটারোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম বলে।
- সেক্স লিঙ্কড ডিজঅর্ডার বা X জিন নিয়ন্ত্রিত রোগ- লাল-সবুজ বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া, ডুসেন মাসক্যুলার ডিসট্রফি, হাইপারট্রাইকোসিস(সমগ্র দেহে ঘন লোমের উপস্থিতি), টেস্টিকুলার ফেমিনাইজেশেন (পুরুষ ধীরে ধীরে স্ত্রীতে পরিণত হয়)। মানুষের Y জিন নিয়ন্ত্রিত একটি বৈশিষ্ট্য হল কানের লোম।
- এরিথ্রোব্লাস্টোসিস ফিটালিস প্রতিরোধে ব্লাডগ্রুপ জেনে বিয়ে করা উচিৎ।
- বিবর্তনের জনক এম্পেডোক্লিস
- অর্জিত বৈশিষ্ট্যের উত্তরাধিকার মতবাদ দেন ল্যামার্ক। প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদের প্রবক্তা চার্লস রবাট ডারউইন। এইচ. এম. এস বিগল জাহাজে তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেন এবং প্রাণী নিয়ে গবেষণা করেন।
- সমসংস্থ অঙ্গ(Homologous organ): যেসব অঙ্গের উৎপত্তি ও গঠণের ভিত্তি এক। বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর অগ্রপদ- পাখির ডানা, বাদুরের ডানা, তিমির ফ্লিপার
- সমবৃত্তি অঙ্গ(Analogous organ): যেসব অঙ্গ গঠনগত দিক থেকে আলাদা কিন্তু কাজের দিক থেকে এক। যেমন- পাখির ডানা, প্রজাপতির ডানা।
- নিষ্ক্রিয় অঙ্গ(Vestigial organ): উপপল্লব(nictating membrfane), কক্কিক্স, আক্কেল দাঁত, অ্যাপেনডিক্স।
- জীবাশ্ম নিয়ে জীববিজ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা করা হয় তাকে জীবাশ্মবিদ্যা(Palaeontology) বলে।
- আর্কিওপটেরিক্স(Archaeopteryx) একেটি জীবাশ্ম যা ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ বছর আগে জুরাসিক যুগে বিচরণ করত। এদের মধ্যে সরিসৃপ ও পাখির উভয় বৈশিষ্ট্য দেখা যায় জন্য একে সংযোগকারী সূত্র(Connecting Link) বলে।
- বিজ্ঞানী হাক্সলি বলেছেন ‘‘পাখিরা হলো মহিমান্বিত সরিসৃপ”।
- Platypus একটি জীবন্ত জীবাশ্ম।
তথ্যসূত্র:
১। জীববিজ্ঞান ২য় পত্র: গাজী আজমল ও ড. গাজী আসমত
২। জীববিজ্ঞান ২য় পত্র: ড. মোঃ আবদুল আলীম