বিসিএস প্রিলির প্রাথমিক গাইডলাইন

You are currently viewing বিসিএস প্রিলির প্রাথমিক গাইডলাইন

বিসিএস প্রিলির প্রাথমিক গাইডলাইন পড়ার আগে আগে সর্বপ্রথম আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন রাস্তায় দৌড়াবেন কোন গন্তব্যের জন্য। বাংলাদেশে বর্তমানে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন  চাকুরির পরীক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। এর কারন হতে পারে বিষয়ভিত্তিক চাকুরির সীমাবদ্ধতা, তদবির ছাড়া মেধার মূল্যায়ন, পরীক্ষার স্বচ্ছতা, সম্মানজনক বেতন-ভাতা, আর্থ-সামাজিক মূল্যায়ন ইত্যাদি। চারপাশে আপনার কানের কাছে শুধু বিসিএস বিসিএস আওয়াজ আপনার মনকে না চাইলেও বিচলিত করবে। আপনি যদি মনে করেন বাজারের প্রচলিত দু-একটি গাইড বই মুখস্ত করে সবাই বিসিএস ক্যাডার বনে যাচ্ছে তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। কারন এমন মুখস্থ শক্তি বহু মানুষের আছে যারা কয়েকসেট গাইড মুখস্থ করে ফেলতে পারবে। ৪/৫ লক্ষ পরীক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হতে হলে আপনাকে অবশ্যই সর্বোচ্চ ধৈর্যের, মেধার পরিচয় দিতে হবে দেশের প্রথমসারির কর্মচারী হওয়ার জন্য।

কয়েকটি ধাপে আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষা করা হবে যে একজন চৌকস কর্মচারী হিসেবে আপনি আসলে কতটুকু যোগ্য। তাই আপনাকে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। সবারই পড়ার একটা নিজস্ব পদ্ধতি আছে, শুধু সেটার সাথে একটি যথাযথ পরিকল্পনা ঠিক করে আপনার নিজস্ব কৌশল, পরিশ্রম আর মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে কাজে লাগাতে হবে। বিসিএস প্রিলির প্রাথমিক গাইডলাইন অংশে শুধুমাত্র একটি ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো মাত্র। কিন্তু এটিই আপনাকে হুবহু অনুসরণ করতে হবে তা নয়।

√প্রথমে আপনি বিপিএসসি ওয়েবসাইট থেকে বিসিএস প্রিলিমিনারি সিলেবাসটা নামিয়ে ফেলুন, দয়া করে নিজ চেষ্টায় নামাবেন কারো কাছে লিংক চেয়ে লজ্জা নিবেন না, চাইলেই কারো কাছে সহজে পেতে পারেন কিন্তু এটাও একটা কাজ। তাই নিজ চেষ্টায় গুগল করে সিলেবাসটি নামিয়ে প্রিন্ট করে ফেলুন।

√এবার পুরো সিলেবাসটি কয়েকবার পড়ে ধারনা নেওয়ার চেষ্টা করুন কয়টি বিষয় আছে, কত মার্কস, মার্কস বন্টনগুলো কেমন, কোন কোন টপিক আছে।

√তারপর বিগত বছরের বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলুন একটু বুঝে। পড়ার সময় নিজেকে একজন এক্সামিনার ভাবলে ভালো কাজে দিতে পারে। একটি প্রশ্ন কিভাবে করা হচ্ছে, আপনি হলে কি করতেন।ধারনা নেওয়ার চেষ্টা করুন কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব বেশি দেওয়া হচ্ছে।

√এখন আপনার একটি ভালো ধারনা হয়ে গেলো সিলেবাস এবং প্রশ্নের ধরনের উপর। এখন যে কোন বিষয় আপনি পড়ার সময় বুঝতে পারবেন সেটি আপনার পরীক্ষার সাথে সংগতিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ কিনা।

√ এবার মূল প্রস্তুতি শুরু করার পালা। সিলেবাসটি নিয়ে প্রত্যেকটি টপিক ধরে ধরে শেষ করে ফেলুন বিভিন্ন মূল বই থেকে। যেমন- অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান, গণিত; নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ, সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ; একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির আইসিটি বই ইত্যাদি। এছাড়াও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বই সহ কোন বইগুলো কাজে লাগতে পারে তা সিলেবাসটি ভালো করে পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন। সাথে সহযোগী কিছু বই রাখুন কোন টপিক যদি খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। টপিক ধরে মূল বইগুলো পড়লে আপনার একটি ভালো ধারনা হবে। সবকিছু একটু বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। এনসিটিবি ওয়েবসাইট থেকে মূল বইগুলোর সফট কপিগুলো ডাউনলোড করে নিতে পারেন এবং অবসরে ফেসবুকিং এর পরিবর্তে পড়তে পারেন।

√ ইংরেজি এবং গণিত নিয়মিত চর্চা করার বিষয়। নিয়মিত বাংলা এবং ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকলে দেশের এবং বিদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক নানা বিষয়ে ধারনা পাওয়া যাবে। শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সামগ্রিক বিষয়ে ধারনা থাকা দরকার। একটি ছোট প্যাডে পত্রিকা থেকে প্রতিদিন কিছু ইংরেজি শব্দ এবং তার অর্থ টুকে রাখলে একসময় আপনার একটি বিশাল শব্দ ভাণ্ডার তৈরি হবে। বাংলা এবং ইংরেজি ডিকশনারির হার্ডকপি কাজে লাগান। শব্দগুলো মার্ক করে রাখুন যাতে করে পরবর্তীতে চোখে পড়ে। পড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং চর্চা করলে জড়তা এবং ভয় কাটবে(অপশনাল প্রিলির জন্য)। লেখার মানসিকতা তৈরি হবে যা ভবিষ্যতের পথ সহজ করবে।

√বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের(২০+১৫=৩৫নম্বর) জন্য সৌমিত্র শেখরের বইসহ কমপক্ষে দুটি করে ৪টি বই পড়লে ভালো করা যেতে পারে। এই দুই বিষয়ে ভালো প্রস্তুতি না থাকলে মার্কস অনেক কমে যেতে পারে। নিয়মিত সাহিত্য পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকা বোনাস পয়েন্ট হতে পারে।

√কমপক্ষে একটি মাসিক কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়া উচিৎ সাম্প্রতিক বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক(৩০+২০=৫০নম্বর) বিষয়ে ভালো করতে হলে। মানসিক দক্ষতার বিগত বছরের বিসিএস লিখিত ও প্রিলিতে যে প্রশ্নগুলো এসেছে সেগুলো অবশ্যই সমাধান করতে হবে।

√কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিশেষ সংখ্যা এবং একটি ডাইজেস্ট পড়ে ফেলুন।

√সবগুলো বিষয় পড়া শেষ হয়ে গেলে বিভিন্ন মডেল টেস্ট গুলো সমাধান করে নিজেকে যাচাই করে দেখুন।

## এখানে প্রত্যেকটি বিষয় ধরে ধরে আলোচনা করা হয়নি আপনার নিজস্বতাকে কাজে লাগানোর জন্য। বাকি কাজ কিভাবে করতে হবে তা না হয় নিজের মতো করে সাঁজিয়ে নিলেন। এতে একটা মানসিক প্রশান্তি অর্জন হয়। যে কোন বই কিনতে কার্পণ্য করবেন না।

**সর্বোপরি নিজের গাইডলাইন হচ্ছে বেস্ট গাইডলাইন। আপনি আপনার সুবিধামতো পরিকল্পনা তৈরি করে প্রস্তুতি নিতে থাকুন। অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজের জন্য নিজে একটি নির্দেশনা তৈরি করে চলতে শুরু করুন এ বন্ধুর পথ। একসময় মসৃণ পথ আপনার সামনে চলে আসবে। মনে রাখতে হবে ৪/৫ লক্ষ প্রতিযোগীদের মধ্যে টিকে থাকতে হলে আপনাকে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হবে, মেধা ও শ্রমের সমন্বয় ঘটাতে হবে। বারবার পরিশ্রম না করে ভালোভাবে কয়েকমাস একবার পরিশ্রম করে বাকি ৩০ বছরের জন্য নিজেকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করুন। দেশ আপনাদের মতো মেধাবীদের সেবা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।

“The only one thing that will stop you from fulfilling your dream is you.”—-Tom Bradley

উৎপল কুমার
প্রভাষক, প্রাণিবিদ্যা
৩৫তম বিসিএস(সাধারণ শিক্ষা)

Leave a Reply