প্রাণীদের পরার্থপরতা (Altruism)

You are currently viewing প্রাণীদের পরার্থপরতা (Altruism)

বর্তমান পৃথিবী যেখানে স্বার্থপরতায় জর্জরিত সেখানে কিছূ প্রাণী স্বজাতীয় অন্য প্রাণীদের কল্যাণে নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে। প্রাণীর এ আচরণকেই বলে একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা বা পরার্থপরতা (Altruism)। মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীরা কিভাবে অপরের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে তার কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ এখানে তুলে ধরা হল।

০১। মৌমাছির পরার্থপরতা

সামাজিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ মৌমাছি। একটি মৌচাকে একটি রাণী, কয়েক হাজার কর্মী(worker) ও কয়েকশত পুরুষ(drone) মৌমাছি থাকে। এই পুরুষ মৌমাছিরা মৌচাকের সবথেকে অলস প্রাণী। শুধুমাত্র জীবনে একবার রাণীর সাথে যৌন মিলনের আশায় এরা বেঁচে থাকে। একটি রাণী মৌমাছি প্রায় ৫০০ পুরুষ মৌমাছির সাথে মিলনে অংশগ্রহণ করে। মিলনের পর পুরুষ মৌমাছিরা মারা যায়। নিজ প্রজাতির ভবিষ্যৎ রক্ষার্থে এরকম আত্মত্যাগ এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

মৌমাছি

০২। মাকড়সার জীবনোৎসর্গ

জাপানি ফোলিয়েজ নামক এক ধরনের মাকড়সা বুকের উপর বৃহৎ সাদা ডিমের পিণ্ড ধারণ করে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে মায়ের দেহকে খেতে খেতে একসময় মায়ের দেহ নিঃশেষ করে ফেলে। মাকে বুঝতে পারার আগেই ওরা মাতৃহত্যা করে নিজের জীবন বাঁচায়। আর মা তার বাচ্চাদের কল্যাণের কথা চিন্তা করে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেয়। 

প্রাণীদের পরার্থপরতা (Altruism) মাকড়সা
মাকড়সা

০৩। Petromyzon বা ল্যাম্প্রে 

ল্যাম্প্রে এক অভিনব প্রজননিক আচরণ প্রদর্শণ করে। শরৎকালে এরা ডিম পাড়ার সময় সমুদ্র থেকে নদীপথে যাত্রা শুরু করে।  এরকম যাত্রাকে Anadromous migration বলে। নদীতে গিয়ে তারা বাসা তৈরি করে। অগভীর পানিতে যেখানে স্রোত বেশি সেখানে পুরুষ প্রাণীটি চোষকের সাহায্যে স্ত্রী প্রাণীকে জড়িয়ে ধরে। তারপর অনবরত মোচড়াতে থাকে।  মোচড়ানোর ফলে স্ত্রী প্রাণীটি উদ্দীপিত হয়ে ডিম ছেড়ে দেয় এবং পুরুষ প্রাণীটি শুক্রাণু ত্যাগ করে। ডিম ফুটে লার্ভা বের হলে  সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার পথে পিতা-মাতা মৃত্যু বরণ করে। সকল ধরনের শারীরবৃত্তীয় কাজ বন্ধ হয়ে তাদের এই মৃত্যু ঘটে। নিজ বংশধরের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। 

Petromyzon বা ল্যাম্প্রে 

০৪। ডলফিন

ডলফিন নানাভাবে Altruism প্রকাশ করে। প্রায়শই দেখা যায় কোন ডলফিন জালে আটকে গেলে বা কোন হাঙরের ফাঁদে পরলে  অন্য ডলফিন এসে উদ্ধার করে। শুধু যে নিজ প্রজাতিকে সে সাহায্য করে তা নয়।  অনেক সময় কুকুর বা মানুষ হঠাৎ পানিতে পড়ে গেলে ডলফিন সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে৷ নিজ প্রজাতির কোন ডলফিন যদি অসুস্থতার জন্য পানির উপরে উঠতে না পারে তবে অন্য ডলফিন নিচ থেকে অসুস্থ ডলফিনকে পানির উপরে ঠেলে দেয়। কারণ ডলফিনকে অক্সিজেন নিতে কিছুক্ষণ  পরপর পানির উপরে ভেসে উঠতে হয়। এভাবে একজন আর একজনের জীবন বাঁচিয়ে সহমর্মিতা প্রদর্শন করে। 

ডলফিন

০৫। অক্টোপাস

সমুদ্রের কয়েক হাজার ফুট নিচেও দেখা গেছে অক্টোপাস তার ডিমকে রক্ষা করতে দিনের পর দিন না খেয়ে আগলে রেখেছে। শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে নিজের বর্ণ পরিবর্তন করে শত্রুকে বোকা বানিয়েছে। যখন ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়েছে তারপর ক্লান্ত, অভুক্ত মা অক্টোপাস মারা গিয়েছে। সবকিছুর উর্ধ্বে নিজ বংশধর রক্ষার এই যে বলিদান তা প্রাণিজগতকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। 

অক্টোপাস

সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। 

কামিনী রায়

একে অপরের প্রতি সহমর্মিতা, পরার্থপরতার চর্চা অর্থাৎ অপরের কল্যাণের জন্য কাজ করলে এই পৃথিবীটা আরও বৈচিত্র্যময় ও আনন্দময় হয়ে উঠবে। 

Leave a Reply