প্রাণিজগতের প্রধান পর্বসমূহের সারসংক্ষেপ

You are currently viewing প্রাণিজগতের প্রধান পর্বসমূহের সারসংক্ষেপ

কর্ডেট প্রাণীদের ভ্রুণাবস্থায় বা আজীবন পৃষ্ঠ-মধ্যরেখা বরাবর দন্ডাকার, স্থিতিস্থাপক ও নিরেট নটোকর্ড থাকে।  যে সকল প্রাণীর নটোকর্ড মেরুদণ্ড দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় তাদেরকে মেরুদন্ডী প্রাণী বলে। 

তার মানে নটোকর্ডের উপর ভিত্তি করে প্রাণিজগতকে দুই গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে।  যেমন- (ক) Non-chordata এবং (খ) Chordata  

পর্বগুলোর প্রাণীর বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে কাদের ভ্রুণস্তর কত স্তর বিশিষ্ট এবং কাদের সিলোমের প্রকৃতি কেমন সেটা জানলে সুবিধা হবে বুঝতে। যেমন-

?ডিপ্লোব্লাস্টিক বা দ্বিস্তরী- Cnidaria পর্বের প্রাণী।

?ট্রিপ্লোব্লাস্টিক বা ত্রিস্তরী- Platyhelminthes, Nematoda, Mollusca, Annelida, Arthropoda, Echinodermata, Chordata

? Acoelomate( সিলোমবিহীন)- Porifera, Cnidaria, Platyhelminthes.

? Pseudo-coelomate(অপ্রকৃত সিলোম)- Nematoda.

? Eucoelomate(প্রকৃত সিলোম)- Mollusca, Annelida, Arthropoda, Echinodermata, Chordata.

খুবই সংক্ষেপে Non-chordata  ও Chordata পর্বের প্রাণিদের বৈশিষ্ট্য (পর্ব পর্যন্ত) নিম্নে আলোচনা করা হলো।

পর্ব-১ঃ  Porifera(পরিফেরা) বা ছিদ্রাল প্রাণী

[ল্যাটিন, porus=ছিদ্র+ferre=বহন করা]

★ দেহপ্রাচীরে অস্টিয়া নামক ছিদ্র থাকে।

★ স্পিকিউল নামক ক্ষুদ্র কাঁটা অথবা স্পঞ্জিন থাকে।

★ দেহে পানি প্রবাহের জন্য নালিতন্ত্র থাকে।

★ কোয়ানোসাইট নামক কোষ বিদ্যমান

★ নালিতন্ত্র অসক্যুলাম ছিদ্রপথে বাইরে উন্মুক্ত।

উদাহরণ- Scypha gelatinosum

পর্ব-২ঃ Cnidaria(নিডারিয়া) বা রোমকাঁটা যুক্ত প্রাণী

[গ্রীক, knide=রোমকাঁটা+ল্যাটিন aria=সংযুক্ত] 

এরা সমুদ্রের Rain Forest নামে পরিচিত। 

Hydra
Aurelia

★ এরা অরীয় প্রতিসম অর্থাৎ দেহকে কেন্দ্রীয় লম্ব অক্ষ বরাবর দুইয়ের বেশি সংখ্যক সদৃশ অংশে ভাগ করা যায়।  

★ ডিপ্লোব্লাস্টিক, এপিডার্মিস ও এন্ডোডার্মিস এর মাঝে অকোষীয় মেসোগ্লিয়া থাকে।

★ নিডোসাইট(cnidocyte) নামক কোষ নেমাটোসিস্ট নামক দংশন অঙ্গাণু বহন করে।

★ সিলেন্টেরন নামে পরিপাক সংবহন গহ্বর থাকে।   

★ অনেক প্রজাতি বহুরুপিতা প্রদর্শন করে। 

যেমন-Obelia,  এদের পলিপ ও মেডুসা দশা দেখা যায়। পলিপ স্থবির ও অযৌন জননক্ষম এবং মেডুসা মুক্ত ও যৌন জননক্ষম।

উদাহরণ- Hydra vulgaris, Aurelia aurita(জেলিফিশ)

পর্ব-৩ঃ Platyhelminthes(প্লাটিহেলমিনথেস) বা চ্যাপ্টা কৃমি

[গ্রীক, platys=চ্যাপ্টা+helminth= কৃমি]

★ দেহ নরম, পাতার মতো বা ফিতার মতো লম্বা, দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম।

★ দেহত্বক কিউটিকল আবৃত

★ ত্রিস্তরী কিন্তু অ্যাসিলোমেট(সিলোমবিহীন)

★ অনেকক্ষেত্রে বাহ্যিক চোষক/হুক বা উভয়ই থাকে।  

★ রেচনতন্ত্র শিখা কোষ(Flame cell) নিয়ে গঠিত। 

★ এরা উভলিঙ্গ এবং জীবনচক্রে অনেক ধরনের লার্ভা দশা দেখা যায়।

উদাহরণ- Fasciola hepatica, Taenia solium

পর্ব-৪ঃ Nematoda(নেমাটোডা) সুতা কৃমি বা গোল কৃমি

[গ্রীক, nematos=  সুতা+eoidos=আকৃতি+helminth=কৃমি]

★ দেহ নলাকার, দ্বিপার্শ্বীয় প্রতিসম, দুদিক সুঁচালো

★ অপ্রকৃত সিলোমেট ও অখন্ডায়িত 

★ দেহ নমনীয়,  ইলাস্টিন নির্মিত কিউটিকলে আবৃত। 

★ পৌষ্টিকনালি নলের মতো মুখ থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত।

★ যৌন দ্বিরুপতা(Sexual dimorphism) দেখা যায়। অর্থাৎ একই প্রজাতির স্ত্রী ও পুরুষ সদস্য বর্ণ, আকার, আকৃতি, গঠনগতভাবে পৃথক।  

উদাহরণ- Loa loa, Trichinella spiralis

পর্ব-৫ঃ Mollusca(মলাস্কা) বা কম্বোজ প্রাণী

[ল্যাটিন, molluscus=নরম]

★ দেহ নরম, মাংসল, অখন্ডায়িত এবং ম্যান্টল নামক পাতলা আবরণে আবৃত।

★ সাধারণত দেহ খোলকের মধ্যে থাকে।  

 ★ প্রকৃত সিলোমেট, অধিকাংশ দ্বিপার্শীয় প্রতিসম এবং সুস্পষ্ট মাথা বিশিষ্ট।

★ দেহগহ্বর হিমোসিলে পরিণত।

★ মাংসল পা বিদ্যমান।

★ পৌষ্টিকনালি প্যাঁচানো। 

উদাহরণ- Pila globosa, Pinctada vulgaris

পর্ব-৬ঃ Annelida(অ্যানিলিডা) বা অঙ্গুরীমাল

[ল্যাটিন, annulus=ছোট আংটি+eidos=রুপ]

Metaphire posthuma(কেঁচো)

★ দেহ লম্বা নলাকার, দ্বিপার্শীয় প্রতিসম, ত্রিস্তরী, প্রকৃত সিলোমেট।

★ প্রকৃত খন্ডকায়ন বিদ্যমান, চলন অঙ্গ হিসেবে সিটি বা পেশল প্যারাপোডিয়া থাকে।

★ রেচন অঙ্গ নেফ্রিডিয়া। 

★ রক্ত সংবহনতন্ত্র বদ্ধ প্রকৃতির।

★ মুখ ও পায়ুছিদ্র সম্পন্ন পৌষ্টিকনালি। 

 উদাহরণ- Hirudo medicinalis  (জোঁক)

পর্ব-৭ঃ Arthropoda(আর্থ্রোপোডা) বা সন্ধিপদী প্রাণী

[ গ্রীক, arthros= সন্ধি+podos= পা]

Hexapod

★ সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গবিশিষ্ট, দ্বিপার্শীয় প্রতিসম, খন্ডকায়িত ও ট্যাগমাটায় বিভক্ত।

★ মস্তকে একজোড়া বা দুজোড়া এন্টেনা ও সাধারণত একজোড়া পুঞ্জাক্ষি থাকে।

★ প্রকৃত সিলোমেট ও রক্তপূর্ণ হিমোসিল থাকে।

★ বহিঃকঙ্কাল কাইটিন নির্মিত।

★ পৌষ্টিকতন্ত্র সম্পূর্ণ ও উন্মুক্ত রক্ত-সংবহনতন্ত্র বিদ্যামান।

★ রেচন অঙ্গ হিসেবে ম্যালপিজিয়ান নালিকা থাকে। 

 উদাহরণ- Periplaneta americana, Apis indica

পর্ব-৮ঃ Echinodermata(একাইনোডারমাটা) বা কন্টকত্বক প্রাণী 

[গ্রীক, echinos=কাঁটা+derma=ত্বক]

Astropecten

★ সকল সদস্য সামুদ্রিক, দেহ কাঁটাময় ত্বকবিশিষ্ট ও অখন্ডায়িত।

★ দেহ মৌখিক ও বিমৌখিক তলে বিন্যস্ত। 

★ পানি সংবহনতন্ত্র ও নালিকা পদ(tube feet) থাকে।

★ রক্ত-সংবহনতন্ত্র ও রেচনতন্ত্র অনুপস্থিত। 

★ একলিঙ্গ প্রাণী, নিষেক বাহ্যিক, মুক্ত সাঁতারু লার্ভা আছে।

উদাহরণ- Cucumaria planci

পর্ব- ৯ঃ Chordata(কর্ডাটা)

[ল্যাটিন, chorda=রজ্জু+ata= বহন করা]

★ ভ্রুণাবস্থায় বা আজীবন নটোকর্ড থাকে।

★ পৃষ্ঠীয় ফাঁপা স্নায়ুরজ্জু(nerve chord)। 

★ জীবনের যে কোন এক দশায় গলবিলীয় ফুলকারন্ধ্র(gill slits) থাকে।

★ পায়ু পরবর্তী লেজ। 

উদাহরণ- Catla catla, Homo sapiens

তথ্যসূত্র-

১। জীববিজ্ঞান ২য় পত্র-গাজী আজমল ও গাজী আসমত

২। লুমেন লার্নিং  

৩। Wikipedia 

Leave a Reply