চেন্নাইয়ের টিকেটে শ্রীলঙ্কা ঘুরে বেড়ানো অনেকটা এক টিকেটে দুই দেশ দেখার মত । খুবই রোমাঞ্চকর ব্যাপার-স্যাপার। উদ্দেশ্য দুইটা। এক-কম খরচে দ্রুত পৌঁছানো, দুই- অল্প সময়ের জন্য হলেও মাঝখানে একটু শ্রীলঙ্কা ঘুরে দেখা।
ইউএস বাংলায় যেখানে চেন্নাইয়ের ভাড়া ৩১০০০ টাকা(দুজনের) সেখানে শ্রীলঙ্কা ঘুরে গেলে সেটা ১৭০০০ টাকা। হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে কখনও একটু ঘুরাঘুরির সময় হয়না। এবার ভাবলাম সুযোগটা কাজে লাগাই। সেজন্য ShareTrip অ্যাপ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ঝামেলা ছাড়াই টিকেট কেটে ফেললাম।
ঢাকা টু শ্রীলঙ্কা উড়াল
ঢাকা থেকে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সে বন্দেরনায়েকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নেমে ইমিগ্রেশনে হঠাৎ এক আঙ্কেলের দিকে নজর গেল। তিনি অফিসারকে ভাঙা-ভাঙা ইংরেজি দু-একটি শব্দে বুঝানোর চেষ্টা করছেন ট্রানজিটের সময়টাতে বাইরে যেতে পারবেন কিনা। আমি এগিয়ে গিয়ে বিষয়টা বিস্তারিত বুঝিয়ে বললাম এবং কোনভাবে এটা সম্ভব কিনা অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম। কারণ আমাদেরও শ্রীলঙ্কা একটু ঘুরে দেখার শখ। ইমিগ্রেশন অফিসার আমাদের কৌতূহল দেখে সহাস্যে দুটো পথ বাতলে দিলেন।
প্রথমত- যদি আমাদের কোন হোটেল বুকিং করা থাকে বা কোন হোটেল বুকিং ভাউচারও থাকে তাহলে আমরা বের হতে পারব। আমাদের কোন ফি লাগবে না।
দ্বিতীয়ত- জনপ্রতি ২৫ ডলার দিলে আমাদের ভিজিট ভিসা দিবে ২ দিনের।
উনি আবারও জানতে চাইলেন কেন আমরা বাইরে যাব? আমরা শুধু ঘুরার উদ্দেশে মাত্র ৪/৫ ঘন্টার জন্য বের হব বললাম। আমাদের উৎসাহ দেখে উনি আমাদের জন্য ৩০ ডলারে তিনজনের ভিজিট ভিসা ইস্যু করার ব্যবস্থা করে দিলেন।

মাঝখানে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন আজকের(বাংলাদেশ vs আফগানিস্তান) খেলা দেখছি কিনা। যেহেতু সিমকার্ড নেই এবং ইন্টারনেট কানেকশন দেইনি সেজন্য বললাম আমরা দেখতে পারিনি। ইতিমধ্যে আমাদের সোনার ছেলেরা গো-হারা হেরেছে। উনার হাসি দেখেই বুঝতে পারলাম কারন পরের ম্যাচ যে শ্রীলঙ্কার সাথে। এই লেখা যখন লিখছি তখন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার কাছেও হেরেছে?।
নিগম্ব সি বিচ ভ্রমণ
আমরা ইমিগ্রেশন অফিসার এর পরামর্শ চাইলাম। এই অল্প সময়ে আশেপাশে কোথায় যেতে পারি এবং কি উপায়ে? উনি বললেন- আপনারা নিগম্ব সিটি ঘুরে দেখতে পারেন এবং অবশ্যই রাত ১১ টার মধ্যে ফিরে আসতে হবে। কারন নেক্সট ফ্লাইট রাত ১ টায়। উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা এয়ারপোর্টের ফ্রি ওয়াফাই ব্যবহার করে গুগল করলাম। নিচে নেমে এসে ৪০ ডলার ভাঙিয়ে ১৪৩২০ শ্রীলঙ্কান রুপি পেলাম।

টুকটুক গাড়িতে যাত্রা
এবার ভ্রমণের পালা। এয়ারপোর্টের বাইরে ট্যাক্সিগুলো ৬/৭ হাজার রুপি ভাড়া হাঁকাচ্ছে। আগেই জেনেছিলাম এখানে আমাদের দেশের অটোর মত টুকটুক গাড়ি পাওয়া যায়। একটু দূরে হেটে গিয়ে পেয়ে গেলাম। অস্থির অর্থনৈতিক অবস্থার কারনে ভাড়া অনেক বেশি হয়ে গেছে। ১২০০ রুপিতে একটা টুকটুক ঠিক করে ফেললাম। প্রায় ১৪ কিলোমিটার রাস্তা ৩০ মিনিটে চলে আসলাম নিগম্ব সি বিচ। বর্তমান পরিস্থিতির কারনে পর্যটক খুবই কম তারপর আবার মেঘলা পরিবেশ। সমুদ্রের পানিতে একটু পা ভেজালাম। পাথরের উপর দাড়িয়ে একটু ফটোসেশান।
কট্টু(Kottu) ভোজন
বিচে বেশ কিছু ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান মিলে গেল। সন্ধ্যা নেমে আসাতে দোকানের আলোগুলো বিচটাকে একটা অন্যরকম পরিবেশ দান করল। নারকেল গাছ, খাবারের ঘ্রাণ, মৃদুমন্দ বাতাস আর সমুদ্রের গর্জন এক অসাধারণ মন মাতানো পরিবেশ।

বিচ থেকে একটু সামান্য দূরে Grand Ocean Park নামক এক রেস্টুরেন্টে বসলাম কফি খাওয়ার জন্য। এরপর শুরু হল ঝুম বৃষ্টি। কোনভাবেই থামার নামগন্ধ নাই। ডিনারের সময় হয়ে গেল। তখন আমরা জিজ্ঞেস করলাম আপনাদের ফেবারিট ডিশ কি? আমাদের কট্টু সি ফুডের পরামর্শ দিলেন। একটা প্যাকেজ নিলাম ১৬০০ রুপি বাংলাদেশি টাকায় ৪১৬৳ এর মত। চপ করে কুঁচিকুঁচি রুটির সাথে সি ফিশ এবং বিভিন্ন মশলা। তিনজন খেয়েও শেষ করতে পারলাম না। বাকিটুকু পার্সেল করে নিলাম।

এয়ারপোর্টে ফেরত
এবার কিন্তু বৃষ্টি কিছুতেই থামছেনা। একটা টুকটুক রেস্টুরেন্টের বিপরীত পাশে পার্ক করা আছে। ওদের সোসাইটি খুব স্ট্রং। সে ভাড়া দাবি করল ২৫০০ রুপি। নিয়ম হল ও যতক্ষণ ওখানে পার্ক করা থাকবে অন্য কোন টুকটুক সেখানে থামবে না। বৃষ্টির কারনে আমরা অন্য কোথাও যেতে পারছিনা। ইচ্ছে ছিল আরও কিছু জায়গা ঘুরে দেখার। রাত বাড়তে থাকায় এবং নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা ৯ টার মধ্যে অগত্যা ১৮০০ রুপিতে ভাড়া মিটমাট করে এয়ারপোর্টে ফিরে আসলাম। হিসাব করে দেখলাম আমাদের সব মিলিয়ে ৫৫ ডলার খরচ হয়েছে। ইমিগ্রেশন শেষ করে রাত ১ টার শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। বিশেষ কৃতজ্ঞতা আবুল কালাম আজাদ আঙ্কেলের প্রতি। যার উছিলায় একটি ভিন্ন দেশের মাটিতে আমরা পদচিহ্ন রাখতে সক্ষম হয়েছি। পরবর্তী গন্তব্য চেন্নাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বৃষ্টি তখনও থামেনি ?️!!
চলবে——-
পরবর্তী লেখা চেন্নাইতে ঘুরাঘুরি??