এরিস্টটল ও প্রাণিবিজ্ঞান

You are currently viewing এরিস্টটল ও প্রাণিবিজ্ঞান

এরিস্টটল ও প্রাণিবিজ্ঞান সূচনার গল্প:

“মৃত্যু সম্পর্কে  আমি আদতেই ভীত নই। মৃত্যুকে আনন্দের সাথে গ্রহণ করা সমীচীন। জীবনের এপার কিংবা মৃত্যুর ওপারে মহৎ আত্মার ক্ষতিসাধন কেউ করতে পারেনা। পরলোকে অন্তত প্রশ্ন করার অপরাধে কাউকে হত্যা করা হয় না।”—সক্রেটিস

 

আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে মহান গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস কোন রকমের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই এবং নিজে একটিও বই না লিখেও তাঁর দর্শন ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন তার প্রিয় শিষ্য প্লেটো এবং প্লেটোর শিষ্য এরিস্টটলের মাধ্যমে।  গুরুর কথা না বলে সরাসরি শিষ্যের আলোচনায় না যাওয়ার জন্য এই অবতারণা।  

 

প্রাচীন গ্রীস ছিলো মানব-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, শিল্পকলার অন্যতম পীঠস্থান। সেই গ্রীসের স্ট্যাগিরা নগরীতে ৩৮৪ খ্রিষ্টপূর্বে জন্মগ্রহণ করেন এরিস্টটল। যিনি একাধারে দর্শনশাস্ত্র, প্রাণিবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, রাষ্ট্রনীতি, কাব্যরীতি প্রভৃতি বিষয়ে অবদান রেখেছেন। তার পিতা ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজদরবারের একজন চিকিৎসক।  তার পারিবারিক আবহ ছিলো বৈজ্ঞানিক-সংস্কার সম্পন্ন যেখানে তিনি তাঁর শৈশব ও কৈশরকাল কাটিয়েছেন।   

 

এজন্য তার মধ্যে একটা বৈজ্ঞানিক মনোভাব ছোটবেলা থেকে গড়ে ওঠে।  ১৭ বছর বয়সে এরিস্টটল এথেন্সে চলে যান এবং প্লেটোর ‘একাডেমি’ তে ভর্তি হন ৩৬৭ অব্দে। প্লেটো এরিস্টটল সম্পর্কে বলেছেন- ‘মূর্তিমান মেধা’।  গুরুর কাছে এমন সম্মান যিনি পেতে পারেন তাঁর তো জীবন ধন্য। তিনি ছিলেন সার্বভৌম পণ্ডিত, তারঁ গ্রন্থশালার সংগ্রহ ছিলো বিশাল। ৩৪৭ অব্দে প্লেটো মারা গেলে দীর্ঘ ২০ বছর একাডেমিতে শিক্ষাজীবন শেষ করে পরবর্তীতে এশিয়া মাইনরের দ্বীপ লেসবসে চলে যান এবং সেখানে সামুদ্রিক জীবজন্তুর উপর গবেষণা করতে থাকেন।  এর মধ্যে মেসিডোনিয়ার রাজা ফিলিপ তার সন্তান আলেকজান্ডারকে শিষ্য হিসেবে গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। ৩৩৮ অব্দে তিনি আলেক্সান্ডারকে পড়ান শুরু করেন। আলেকজান্ডার দেশ বিজয়ে বের হলে এরিস্টটল এথেন্সে গিয়ে তাঁর নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্টান লাইসিয়াম(Lyceum) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি প্লেটোর একাডেমি থেকে ভিন্ন ছিলো এবং গবেষণা নির্ভর ছিলো। এই গবেষণার কার্যে সরাসরি আলেকজান্ডার এর রাজষিক ও আর্থিক আনুকূল্য ছিলো।  গবেষণা কার্যে ব্যবহৃত লতা, পাতা, বৃক্ষ, জীবজন্তু সরবরাহের জন্য প্রায় সহস্র লোক নিযুক্ত ছিলো সম্রাটের হুকুমে। মূলত জ্ঞান-গবেষক এরিস্টটল এর নিরলস প্রচেষ্টায় সেই প্রাচীনকালে দস্তুর মত একটা জীব-গবেষণাগার তৈরি করেছিলেন। 

 

এরিস্টটলের লাইসিয়াম( Peripatetic School)

 

‘Historia Animalium’ গ্রন্থে মানব ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসাবে তিনিই প্রাণীদেরকে একই বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শ্রেণিভাগ করার চেষ্টা করেন। যাদের রক্ত লাল  এবং যাদের রক্ত লাল নয় তার ভিত্তিতে তিনি প্রাণীদেরকে বিভক্ত করেন। তাঁর হাইপোথিসিস বিজ্ঞানভিত্তিক না হলেও কয়েকশত বছর ধরে এটাই আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হত । তিনি আবাসস্থলের উপর ভিত্তি করে প্রাণীদের বিভক্ত করেন যারা জলে বাস করে আর যারা স্থলে বাস করে।  তিনি অনেক সামুদ্রিক প্রানীর ব্যবচ্ছেদ করে নিবিড়ভাবে তাদের এনাটমিক্যাল বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করেছেন। বায়োলজিক্যাল শ্রেণিবিন্যাসের থেকে তার সামুদ্রিক প্রাণীর উপর পর্যবেক্ষণ অনেকবেশি উপযুক্ত ও যথাযথ ছিলো। তিনি প্রানীদের নিয়ে লিখেছেন-Progression of animals, Movement of animals, Natural history, The parts of animals, The generation of animals সহ অনেক বই। প্রাণিবিজ্ঞানের এমন সূচনা বা ভিত্তি যিনি তৈরি করে দিয়ে গেছেন, গবেষণার দূয়ার যিনি প্রথম খুলেছিলেন,  সেই মহান শিক্ষক ও গবেষক প্রাণিবিজ্ঞানের জনক হিসাবে জ্ঞানের জগতে স্থান পেয়েছেন। 

 

“We are what we repeatedly do. Excellence then, is not an act, but a habit.” — এরিস্টটল।

 

‘শিক্ষার শেকড়ের স্বাদ তেতো হলেও এর ফল মিষ্টি’—এরিস্টটল।

 

আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর এরিস্টটলেের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি যুবকদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন তাই তিনি এই বলে পালিয়ে যান—দ্বিতীয়বার তিনি এথেন্সকে দার্শনিক হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হতে দেবেন না। এরিস্টটল চেলসি দ্বীপে চলে যান এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৩২২ অব্দে। 

 

এরিস্টটল গত হয়েছেন ২৩০০ বছরেরও বেশি সময় কিন্তু তার দর্শন ও বিজ্ঞান চিন্তা আজও আমাদেরকে প্রভাবিত করে। লাইসিয়ামের বৃত্তাকার  ছায়াশীতল পথে তিনি ঘুরে ঘুরে বক্তব্য দিতেন আর তার শিষ্যরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সেই দার্শনিক, শিক্ষকের বক্তব্য শুনত। সক্রেটিস, প্লেটো,  এরিস্টটল পৃথিবীর বুকে জ্ঞানের যে ধারা চালু করেছিলেন তা অব্যাহত থাকুক সকল জ্ঞানপিপাসুর জন্য।          

 

তথ্যসূত্র-

 

সক্রেটিস—হাসান আজিজুল হক

 

এরিস্টটল এর পলিটিক্স—সরদার ফজলুল করিম

 

https://www.biography.com/.amp/scholar/aristotle

 

 

Leave a Reply